লিখাটা যতটুকু লিখেছি, অনুভূতির তুলনায় খুবই সামান্য

প্রকাশিত: 10:19 AM, October 4, 2022

সিনো-বাংলা ডেস্ক: গতকাল দিনের ঘোরাঘুরি শুরু হয় বন্ধুর আত্নীয়ের বাড়িতে যাওয়ার মাধ্যমে। সেখানে পৌঁছাতে পাহাড়ের কোলঘেষে উচু নিচু অনেকটা পথ পাড়ি দিয়ে যাওয়া লাগে। ঘন্টাখানেকের পথ। যেতে যেতে পাহাড়ের দৃশ্য, বাড়িঘরের দৃশ্য মুগ্ধ করছিলো খুব।

গন্তব্যে পৌছানোর পর বন্ধুর আত্নীয়দের সহৃদয় উষ্ণ অভ্যর্থনা, হাসিমুখ ভালো লেগেছে। সেখানে দুপুরের খাবারের পর বিশ্রাম নিয়ে যাত্রা শুরু হয় আসল গন্তব্যে।

তখন পড়ন্ত বিকালবেলা, বিপদজনক রাস্তা গাড়িতে করে পাড়ি দিয়ে পাহাড়ের চুড়াতে পৌছাই এবং আমার দিনের আনন্দ সবে শুরু হয়। পাহাড়ের চুড়ায় এতো ভালো লাগছিলো বলে প্রকাশ করা সম্ভব নয়।

পাহাড়ের চুড়ায় অবস্থিত বাড়িটিতে আমার বন্ধুর বোন জামাইয়ের ছোটবেলা কেটেছে। তবে এখনো সেখানে বিদ্যুৎ সহ থাকার প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র রয়েছে। তাদের বাসার পাশের গাছ থেকে বাদাম পেরে খেলাম তারপর ড্রোন ওড়ানো, হাসি ঠাট্টা, কাঠবাদাম পাড়া এরকম করেই সন্ধা নেমে এলো পাহাড়ের দেশে। ঠিক করে বললে এভাবে বলতে হয় চাঁদ মামা সংগে করে সন্ধা নিয়ে এলো। একেতো সন্ধা শুরু হলো, অপরদিকে পাহাড়ের কাছাকাছি থাকা বাড়ি থেকে শুনতে পাচ্ছি গুনগুনিয়ে গান আহা! যেনো কোন মা তার বাচ্চাকে কোলে নিয়ে গাইছে “খোকা ঘুমালো পাড়া জুড়ালো, বর্গি এলো দেশে”।

তার কিছুক্ষন পর আমরা সেই বাড়িটির উদ্দেশ্যে রওনা দেই। এটি আসলে প্রতিবেশীর বাড়ি। বাড়িটিতে গিয়ে দেঝি জনা আটেক লোকের আড্ডা। আড্ডায় দুজন বাদে বাকি সবাই বৃদ্ধ। বেশিরভাগই এখানে থাকেন আর বাকি কতক লোক পাহাড় বেয়ে এসেছেন সান্ধকালিন আড্ডা দিতে। আমরা চার জনও তাদের আড্ডায় শরিক হলাম। চাইনিজ ছেলেটি পুরনো প্রতিবেশির খোজখবর নিলো, আড্ডা দিলো, হাতে কিছু টাকা গুজে দিলো। সেই পরিবারটি আমাদের যথাসাধ্য আপ্যায়ন করলো চা, মিষ্টি আলু, কুমড়োর বিচি, কিউয়ি ফ্রুটস দিয়ে।

যতদুর জানি চাইনিজ ছেলেটি ড্রোন কোম্পানি তে চাকরি করে, তার সাথে ড্রোন ছিলো, প্রতিবেশীদের কৌতুহলে ড্রোন উড়িয়ে দেখালো। আরও কিছুক্ষন আড্ডা চললো। আমি কিছুটা আড্ডায় শরিক হই কিছুটা মুখ ঘুরিয়ে চান্দের দিকে চেয়ে থাকি। পাহাড়ে চাঁদ দেখা স্বর্গীয় অনুভুতি। ইচ্ছে করছিলো আজকে এখানে থেকেই যাই।

যাইহোক আড্ডা পর্ব শেষে রাত ৮:২০ এ ফেরার পালা। প্রতিবেশীটি টর্চ হাতে নিয়ে আমাদের গাড়ি পর্যন্ত এগিয়ে দিলো। গাড়ি পার্ক করা যায়গার পাশে তাদের গরুর খামারটি দেখালো।

উল্লেখ্য আমি যে শহরটিতে এসেছি শুনেছি এটি হুনান প্রদেশের মধ্যে দরিদ্রতম শহর। কিন্তু আমি পাহাড়ের চুড়ায় গিয়েও দেখলাম তাদের তিন তলা বাড়ি এবং জীবন ধারনের প্রয়োজনীয় সব কিছুই আছে। এতো উচুতে নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সং্যোগ আর ভালো নেটওয়ার্ক দেখলেই তো অবাক লাগে। প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই চায়না কমিউনিস্ট পার্টির চেয়ারম্যান Mao Zedong এর ছবি। এমন উন্নত চীনই বুঝি চেয়ারম্যান Mao Zedong চেয়েছিলেন। বুঝি চেয়েছিলেন পাহাড়ের উচু থেকে নিচু স্থানের বাসিন্দা যাই হোক সবাই সমানাধিকার পাবে এবং থাকবে না কোন দারিদ্রতা। তাইতো তাকে চায়নার সবাই এতো সম্মানের চোখে দেখে।

আবার মূল প্রসংগে ফেরা যাক, ফেরার পথে ঘন্টাখানেকের বেশি সময় পাহাড়ের কোলে গাড়ি ড্রাইভিং কিন্তু পথই শেষ হয় না, এতোটাই গভীরে গিয়েছিলাম আমরা। পাহাড়ের পথ ধরে ফেরার পথে জানালার পাশে মাথা দিয়ে চাঁদ দেখেছি, ঠান্ডা বাতাস অনুভব করেছি, উপর থেকে শহরের বাতি দেখেছি। গাড়ি থামিয়ে, আলো নিভিয়ে, পাহাড়ি ঝর্নার বয়ে চলা পথে অল্প সময় আড্ডা দিয়েছি।

ফেরার পথে শহরের অলিগলিতে লাল বাতির পসরা দেখেছি, বাইরে খাওয়া দাওয়া শেষে বাড়ি ফিরেছি রাত বারোটায়। লিখাটা যতটুকু লিখেছি, অনুভূতির তুলনায় খুবই সামান্য।

লেখক: সাব্বির আহমেদ, চীন প্রবাসী